20/11/2011

20-11-2011: দুর্বলতমের উদ্বর্তন – পুঁজিবাদের অবসান ঘটাতে ঠিক এই মন্ত্রকে হাতিয়ার করেই এগোতে হবে সারা বিশ্বকে... Arindam Choudhury from " The sunday indian..

বলাই বাহুল্য, ওয়াল স্ট্রিটের এই সাম্প্রতিক বিক্ষোভ থেকে কিন্তু ভারতেরও অনেক কিছু শেখার আছে৷ পাশ্চাত্যে যদি নিজেদের বঞ্চনা নিয়ে মানুষ রাস্তায় নেমে এসে ভাঙচুর চালাতে পারে, ভারতেও কিন্তু এমন ঘটনা যে কোনও দিন ঘটতে পারে৷ আমাদের নেতারা যে কতভাবে শুষে নিয়েছে আমাদের প্রতি বিন্দু রত্তু, তার কোনও হিসেব নেই৷ তাই এর প্রতিবাদে-প্রতিশোধে মানুষ সত্যি যদি কোনওদিন উত্তাল হয়ে ওঠে, তাহলে কি সত্যি তা খুব বিস্ময়কর হবে?
2010-এর মানব উন্নয়ন সূচক বলছে 169টি দেশের মধ্যে ভারতের স্হান 119৷ আর তেন্ডুলকর কমিটির 2010-এর রিপোর্ট অনুযায়ী  ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় 37 শতাংশ বসবাস করেন দারিদ্রসীমার নিচে৷ সরকার যদিও এই তথ্যকে মান্যতা দেয়না৷ শুধু তাই নয়, ভারতীয় রাজনীতিক ও নীতি নির্রকরা কতখানি নির্লজ্জ একবার ভেবে দেখুন শহুরে ভারতবাসীদের ক্ষেত্রে দরিদ্র বলতে তাঁরা বোঝেন যাদের দৈনিক 32 টাকা, আর গ্রামে সেই তুল্যমান গিয়ে দাঁড়ায় দৈনিক ছাব্বিশ টাকা৷ এর নাম দারিদ্রসীমা? একে তো সর্বহারা সীমা বললেও কম বলা হয়৷ সরকার বলছে, জন প্রতি মাসিক 960 টাকা আয় করলেই নাকি তা দারিদ্রসীমার উধের্ব ওঠার পক্ষে যথেষ্ট৷ সারা বিশ্বে মোট যে রফতানি হয়, তাতে ভারতের অংশীদারিত্ব 1.32 শতাংশ৷ চিনের ক্ষেত্রে এই অঙ্কটা 9.6 শতাংশ৷ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এটাও নেহাতই কম মনে হওয়ার কথা৷ কারণটা আপনি ইউরোপ কিংবা আমেরিকার যে কোনও দোকান হাতড়ালেই বুঝতে  পারবেন৷ আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট যে কোনও প্রোডাক্টের গায়েই দেখবেন লেখা আছে মেড ইন চায়না’!
আজ মুম্বাই-এর প্রায় চল্লিশ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বসবাস করেন৷ আর দিল্লির প্রায় পঁয়ত্রিশ শতাংশ মানুষ খোলা আকাশের নিচেই মলমূত্র ত্যাগ করেন৷ হাঙ্গার ইনডেক্সে ভারতের স্হান সাতষট্টি৷ এর সঙ্গে ভগ্নস্বাস্হ্য কিংবা অকালমৃতু্য তো আছেই৷ আর আমদের পরম প্রিয় রাজনীতিবিদরা কী করছেন? কেবলই পরস্পরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি৷
তাই আগেও যেটা বলেছি, সেটা দিয়েই শেষ করছি৷ শুধু মানবতার খাতিরেই নয়, নিজের আখের গোছানোর ক্ষেত্রেও তাই দুর্বলতমের তত্ত্বের হাত ধরে হঁাটা ছাড়া পুঁজিবাদের আর কোনও পথ নেই৷ এটাই সেরা সময় যখন পুঁজিবাদী অর্থনীতি এবং বিজনেস লিডারশিপ সার্বিক অর্থেই নিজের ভোল বদলে নতুন ভাবে শুরু করতে পারে৷ সমাজের প্রত্যন্ত মানুষগুলোর মুখ চেয়ে আমাদেরও উচিত আরও বড় হূদয় নিয়ে যথাযথ বিশ্বনাগরিকের দায়িত্ব পালন করা৷ আর যদ্দিন পর্যন্ত তা না হচেছ, ততদিন ওয়াল স্ট্রিটে বিক্ষোভ চলতে থাকুক আর কি! সে বিক্ষোভ ছড়াতে ছড়াতে যদি সারা বিশ্ব গ্রাস করে নেয়, তাতেই বা আশ্চর্যের কী?